#ছোটগল্প
লিখে পাঠিয়েছেন আরেফিন
ঢাকা কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন। ঘড়িতে প্রায় সাড়ে দশটা। সাত নাম্বার প্লাটফর্মে একা একা বসে আছে মিতু। ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছে সে। পঞ্চগড় এক্সপ্রেসে করে বাবার বাড়ি যাবে। বাবার হুট করে শরীর খারাপ করায় রাতে একা একাই পঞ্চগড় যাবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।সেরকম চাপ না থাকায় এসি কেবিনের একটা টিকেট পেয়ে গিয়েছে।যদিও স্বামী রূপক তাকে স্টেশন অব্দি ছেড়ে গেছে। সে একেবারে মিতুকে ট্রেনে উঠিয়ে দিয়েই যেতে চাইছিলো। কিন্তু বাসায় মেয়ে রূপকথা আর মিতুর অসুস্থ শ্বাশুড়ি থাকায় একপ্রকার জোড় করেই রূপককে বাড়ি পাঠিয়েছে মিতু।একা একা পঞ্চগড় যাবার সেই ছাত্র জীবন থেকেই মিতুর অভ্যাস আছে।
— ট্রেন প্লাটফর্ম এ চলে এসেছে। কিন্তু মিতু ট্রেনে উঠছে না। হাতের ব্যাগগুলো নিয়ে চুপচাপ বসে আছে আর ভাবছে এত তাড়াতাড়ি ট্রেনে উঠে কি হবে? ছাড়তে তো এখনো পনেরো মিনিট বাকি। হঠাৎ ফোনের শব্দে চমকে উঠলো মিতু। রূপক ফোন করেছে
— হ্যা রূপক বলো। রূপকথা খেয়েছে? মা কি করছে? মা কি ঘুমিয়েছে? তুমি খেয়ে নিও আর ঔষধ খেতে ভুলো না যেন। এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে গেলো মিতু।
—- হ্যা বাবা সব ঠিক আছে। ট্রেন এসেছে? তুমি ট্রেনে উঠেছো তো? উৎকন্ঠা নিয়ে রূপক বললো।
— এই না।এখনো উঠিনি জানো। ভাবলাম এখনো পনেরো মিনিট আছে। তাই বসে আছি এখনো। মিতু বললো।
— এটা কেমন কথা মিতু? ট্রেনে উঠে কেবিনের যেতেও তো অনেক সময় লাগে।একা যাচ্ছো, তার উপরে এতগুলো ভারি ব্যাগ। তাড়াতাড়ি যাও ট্রেনে ওঠো। ঝাঁঝালো কণ্ঠে কথাগুলো বললো রূপক।
— আচ্ছা এক্ষুনি যাচ্ছি বলে ব্যাগ নিয়ে উঠে দাঁড়ালো মিতু। সত্যিই আর সময় নেই।
— মিতুর কেবিন হলো গ নাম্বার বগিতে। হাতে ব্যাগ নিয়ে ছুটছিলো আর ভাবছিলো এত দেরী করা উচিৎ হয়নি ওর।গ বগির দরজার সামনে এসে একটু দম নিলো মিতু। ওড়না দিয়ে কপালের ঘাম মুছতেই ট্রেন হুইসেল দিলো। মিতু হুটোপুটি করে ট্রেনে উঠতে চেষ্টা করছে, কিন্তু হাতের ব্যাগের জন্য পারছে না। এমন অবস্থায় কেউ একজন ট্রেনের উপর মিতুর হাত থেকে ব্যাগ নিয়ে মিতুর হাত ধরে টান দিয়ে ট্রেনে উঠিয়ে নিলো। মিতু ট্রেনে উঠে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো।
“এখনো সেই অভ্যাসই রয়ে গেছে? ট্রেন ছাড়ার মুহুর্তে এসে ট্রেনে ওঠো?”
ঠিক যখনই মিতু সাহায্যকারী কে ধন্যবাদ দিতে যাবে তখনই প্রায় সাত বছর পরে সেই পরিচিত কণ্ঠস্বর শুনে চমকে তাকালো।
অয়ন না? হ্যা অয়নই তো। এতদিন পর হঠাৎ দেখা তাও পঞ্চগড়ের ট্রেনে? নাকি ভুল ট্রেনে উঠেছে সে। ওর বাড়ি তো লাকসাম। এসব ভাবতে ভাবতেই অয়ন বলে উঠলো
— তোমার কেবিন নাম্বার কত?
— দুই নাম্বার কেবিন।প্রথম কথা বললো মিতু।
— কি বলো? আমি ও তো দুই নাম্বার কেবিনে। বেশ উত্তেজিত হয়ে কথাগুলো বললো অয়ন।
কথা না বাড়িয়ে দুই নাম্বার কেবিনের দিকে যেতে লাগলো মিতু। অয়ন ও মিতুকে অনুসরণ করলো। দুই নাম্বার কেবিনে চারটি সিট।কিন্তু চাপ না থাকায় মিতু আর অয়ন ছাড়া আর কোন যাত্রী নেই। সে কারণে মিতুর কেমন যেন অস্বস্তি লাগছে। ইতোমধ্যে ট্রেন চলতে শুরু করেছে।ব্যাগ গুছিয়ে সব ঠিকঠাক করে মিতু সিটে বসলো। অয়ন অনেক আগেই বসেছে। চুপচাপ মিতুকে দেখছে। (বেলাশেষ)
— হঠাৎ এই ট্রেনে কেন? কোথায় যাচ্ছো? নিরবতা ভাঙলো মিতু।
— অর্পাকে আনতে ওর শ্বশুড়বাড়িতে যাচ্ছি। মাথা নিচু করে জবাব দিলো অয়ন। অর্পা অয়নের ছোট বোন।
— অর্পাকে এত দূরে বিয়ে দিয়েছো? তোমার মা মানলো? খুব শ্লেষাত্মক ভঙ্গিতে কথাটা বললো মিতু।
— মা মারা গেছে অর্পার বিয়ের আগেই। আমিই অর্পাকে বিয়ে দিয়েছি।অনুচ্চস্বরে কথাগুলো বললো অয়ন।।
মিতু ফিরে গেলো সেই বারো বছর আগে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি হয়েছিলো মিতু। খুব চঞ্চল, প্রানবন্ত আর পড়াশোনায় ভালো হবার কারণে বিভাগের সকল শিক্ষক শিক্ষিকার মধ্য মনি ছিলো মিতু। গায়ের রঙ একটু চাঁপা থাকার কারণে সাহিত্যের অনিল স্যার সব সময় মিতুকে রবীন্দ্রনাথের লাবণ্য বলতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বাংলা বিভাগ অংশগ্রহণ করলে মিতুর গান গাইতে হতো আর অভিনয় করতে হতো। মিতু দ্বিতীয় বর্ষে থাকাকালীন বাংলা বিভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের পৌষ পার্বণে অংশ নিয়েছিলো । নানারকম পিঠা দিয়ে স্টল দেওয়া হয়েছিলো টি এস সি তে। মিতুর দায়িত্ব পরেছিলো সেই স্টলে।এদিকে অয়ন এপ্লাই ফিজিক্সের ছাত্র ছিলো।বাবা ছিলো না। মা আর ছোট বোনকে নিয়ে ঢাকা উত্তরা তে থাকতো।মিতুর থেকে বছর দুয়েকের সিনিয়র। এসব পৌষ পার্বণের মতো অনুষ্ঠান অয়নের ভালো লাগতো না। কি মনে করে সেদিন বন্ধুদের সাথে সে পৌষ পার্বণে গিয়েছিলো। সব স্টল ঘুরে দেখতে দেখতে বাংলা স্টলের সামনে যেতেই মিতুর সাথে পরিচয় হলো অয়নের। যে অয়ন কখনো পিঠা জাতীয় কোনকিছু খায়না সে অয়নকে পিঠা খাইয়ে ছেড়েছিলো মিতু।মিতুর চঞ্চলতা খুব মুগ্ধ করেছিলো অয়নকে। সেই থেকে শুরু দুজনের পথচলা। এরপর তারা দুজন অনেকসময় টি এস সি তে আবার অনেক সময় কার্জন হলে আড্ডা দিতো। কখনো বা চলে যেত শিল্পকলা একাডেমিতে নাটক দেখতে।খুব সুন্দর সময় কাটছিলো দুজনের।
— তারপর বলো।একা একা পঞ্চগড় যাচ্ছো যে? অয়ন নিরবতা ভাঙলো।
— আব্বু অসুস্থ। তাই একা একাই রওয়ানা হতে হলো। হাসিমুখে বললো মিতু।
— অহ আচ্ছা। তো বিয়ে করেছো? ছেলেমেয়ে কয়জন? জিজ্ঞেস করলো অয়ন
— হুম করবার যখন করতে তো হবেই বলো। আমার শুধুমাত্র একটা মেয়ে। বয়স চারবছর।তোমার বিয়ের খবর শুনেছিলাম। তো কেমন চলছে দিনকাল? ছেলেমেয়ে কয়জন? একসাথে অনেকগুলো কথা বলে ফেললো মিতু।
—- আমার দুই ছেলে। ওরা অস্ট্রেলিয়াতেই আছে। আমি একটা কাজে দেশে এসেছি। অর্পা ওর শ্বশুড়বাড়িতে তাই আর দেখা হয়নি। তাই ওকে দেখতে যাচ্ছি।বললো অয়ন
— অহ আচ্ছা। তাহলে তো ভালোই। দেশে কতদিন থাকবে? প্রশ্ন করলো মিতু।
— এইতো আছি কয়েকদিন।
অয়ন বলতেই মিতুর ফোন এলো। মিতু হ্যালো বলে ফোন হাতে বের হতেই অয়নের চোখ গেলো মিতুর হাতের চুড়ির দিকে। মিতুর হাতে এখনো একগুচ্ছ কিন্নরী চুড়ি। একবার মিতুকে এই কিন্নরী চুড়িগুলো কিনে দিয়েছিলো অয়ন। চুড়ি পেয়ে খুব খুশি হয়ে সাথে সাথেই সেগুলো হাতে গড়িয়েছিলো। আজ ও সেই চুড়িগুলো মিতু হাতে দিয়ে আছে। খুব অবাক হলো অয়ন।
— এখনো হাতে সেই চুড়ি পরে আছো মিতু? মিতু ফোন শেষ করে এসে বসতেই অবাক হয়ে অয়ন জিজ্ঞেস করলো মিতুকে।
—- এগুলো আমার অসম্ভব প্রিয়। তাই ছাড়তে পারিনি। যদিও অনেক পুরোনো হয়ে গেছে। ম্লান হেসে কথাগুলো বললো মিতু।
—-কাঁচের চুড়িগুলো এখনো আছে? নাকি ভেঙে গেছে? জিজ্ঞেস করলো অয়ন।
—- আমি জানি আমার দেওয়া কোনকিছুই আর তোমার কাছে নেই কিন্তু তোমার দেওয়া সবকিছুই খুব যত্নে রেখে দিয়েছি আমি। নাও খাও।ভয় নেই ঝাল কম। আমার হাজবেন্ড আবার ঝাল কম খায় তাই খাবারে আর সেরকম ঝাল দেওয়া হয়না। অয়নের দিকে নুডলসের বাটি এগিয়ে দিতে দিতে বললো মিতু।
— সুযোগ পেলেই কথা শোনানোর অভ্যেসটা আর গেলো না তোমার।আমি ঝাল কম খাই এখনো মনে রেখেছো তাহলে? নুডলসের বাটি এগিয়ে নিতে নিতে বললো অয়ন।
মিতু কেবিন থেকে বের হয়ে গিয়ে দাঁড়ালো ট্রেনের দরজার পাশে। আর ফিরে গেলো সেই পুরোনো স্মৃতিতে। অয়ন আর মিতু চুটিয়ে প্রেম করছিলো তখন।অয়নের পড়া শেষ। বাহিরে স্কলারশিপ এর জন্য চেষ্টা করছিলো সে। মিতুর পড়া তখন শেষের পথে। মিতু আর অয়নের ইচ্ছে বাহিরে যাবার পূর্বেই দুজনের পরিবারকেই জানিয়ে দেবে তাদের সম্পর্কের কথা। এবং জানিয়েও দিয়েছিলো । ছেলের বাড়ি লাকসাম শুনে মিতুর মা সামান্য আপত্তি করলেও মিতুর বাবা খুব ভালোভাবেই নিয়েছিলেন মিতুর সম্পর্ককে। অয়নের পরিবার কে কথা বলতে বললেন তার সাথে।
এদিকে অয়নের মা মিতুর বাড়ি পঞ্চগড় শুনে আর ছবি দেখে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেছিলেন। অয়নের মায়ের ইচ্ছে অয়নকে বিয়ে দেবেন লাকসামেই। অন্য কোন এলাকার মেয়েকে উনি তার ঘরে তুলবেন না।তাছাড়া মিতর গায়ের রঙ চাপা। কিছুতেই মিতুকে মানতে পারবেন না তিনি। পরের দিন অয়ন যখন মিতুকে এই কথাগুলো বলছিলো মিতু নিরবে শুধু চোখের জল বিসর্জন দিয়েছিলো। এরপরে আর দেখা হয়নি অয়ন আর মিতুর।অয়ন মিতুর সাথে যোগাযোগ কমিয়ে দিয়েছিলো মিতু প্রায় পাগলের মতো হয়ে গিয়েছিলো। অয়নের বন্ধুদের থেকে খোঁজ নেওয়ার কত চেষ্টা করেছে সে। একদিন মিতু কলা ভবনের সামনে বন্ধুদের সাথে বসে ছিলো। তখন অয়নের বন্ধু শাহান সেখানে এসে মিতুকে জানিয়েছিলো অয়নের বিয়ের কথা। মিতু সেদিন হাউমাউ করে কেঁদেছিলো। ওর কান্না দেখে সবাই কেঁদেছিলো সেদিন।
— কি ব্যাপার? শীতের মধ্যে ভেতরে না বসে বাহিরে দাঁড়িয়ে কাঁদছো যে? জিজ্ঞাসু চোখে জিজ্ঞেস করলো অয়ন
— অহ আমার কান্না দেখতে পাও তুমি? আমি আবার ভাবলাম তুমি হয়তো দেখতেই পাবে না। চোখ মুছতে মুছতে বললো মিতু।
— ভেতরে এসে বসো মিতু। বাহিরে ঠাণ্ডা। বলে কেবিনের দিকে চলে গেলো অয়ন।
মিতু কেবিনে গিয়ে বসলো। দেখলো কেবিনক্রু রা কম্বল দিয়ে গেছে। ট্রেন তখন যমুনা সেতু পার করেছে তাই বেশ শীত শীত করছে। তাই মিতু কম্বল জড়িয়ে বসে রইলো। ট্রেন যখন মনসুর আলী স্টেশনে তখন নিরবতা ভাঙলো অয়ন।
— আমি তোমার সাথে এরকম করতে চাইনি মিতু।বিশ্বাস করো মা চাইছিলেন না আমি তোমাকে বিয়ে করি। আমি চেষ্টা করেছিলাম মা কে বোঝাতে। কিন্তু মা কিছুতেই বুঝলেন না। শেষমেশ তোমাকেই ছাড়তে হলো।
—-মা বললো আর ছেড়ে দিলে আমাকে? এই তোমার ভালোবাসা ছিলো? ছেড়ে যখন যাবেই তখন একবার দেখা করতে পারতে। কোনরকম যোগাযোগ না করে পালিয়ে গেলে আমার জীবন থেকে। বললো মিতু।
— আমার আর কি বলার ছিলো বলো? একদিকে মা…….
—- থাক অয়ন ভালো লাগছে না বাদ দাও। আমি খুব ভালো আছি। রূপক খুব ভালো মানুষ খুব ভালো রেখেছে আমাকে।তোমার বিয়ে হয়ে যাবার পরে আমি খুব ভেঙে পরেছিলাম। তখন আম্মু আব্বু আমাকে নিয়ে খুব চিন্তিত হয়ে পরেছিলো।অনেক কষ্টে মাস্টার্স শেষ করলাম। এর মধ্যে মেজ চাচা রূপকের সম্বন্ধ নিয়ে এলো। হুট করে বিয়েটাও হয়ে গেলো।দুবছর পর রূপকথা এলো আমাদের জীবনে।এখন একটা কলেজে প্রভাষক হিসেবে আছি। তোমার কোন দোষ নেই অয়ন।আসলে অদৃষ্টের লিখন ভিন্ন আমরা কেউ কারো অদৃষ্টে ছিলাম না। অয়নকে থামিয়ে একনাগাড়ে কথাগুলো বলে জোড়ে শ্বাস নিলো মিতু।
— আমার বিয়ের পরে আমি আর ইচ্ছে করেই তোমার সাথে যোগাযোগ করিনি। বিয়ের পরে আমি অস্ট্রেলিয়া চলে গেলাম। তার দুবছর পর শ্রেয়া মানে আমার স্ত্রী চলে গেলো। ঢাকায় শুধু মা আর অর্পা থাকতো। হুট করে মা মারা গেলো। আমি গতবছর দেশে এসে অর্পাকে বিয়ে দিলাম ওর পছন্দের ছেলের সাথে। আর এবছর আসলাম দেশের বাড়ির কিছু কাজে। কথাগুলো বলে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলো অয়ন।
ট্রেনের ঝাকুনিতে ঘুম ভাঙলো অয়নের। কখন ঘুমিয়ে গিয়েছিলো বুঝতেই পারেনি। ঘুম ভেঙেই দেখলো মিতু দু কাপ চা তৈরি করেছে।
— ওহ উঠে পরেছো? আমি ভাবছিলাম চা তৈরি করেই আমি তোমাকে ডাকবো।নাও চা খাও। হাসিমুখে বললো মিতু
— আমরা কি প্রায় চলে এসেছি মিতু? চায়ে চুমুক দিয়ে মিতুকে জিজ্ঞেস করলো অয়ন।
— হ্যা আর আধাঘন্টা পরেই নামতে হবে। তুমি কি চিনবে নাকি আমার ভাইকে বলবো পৌঁছে দিতে? জিজ্ঞাসু চোখে জিজ্ঞেস করলো মিতু।
— এখনো আমাকে নিয়ে এত চিন্তা তোমার মিতু? তুমি আগের মতোই আছো মিতু। হ্যা যদি পৌঁছে দেয় না করবো না। আমি আসলে সেরকম কিছু চিনিনা। মাথা নিচু করে জবাব দিলো অয়ন।
—- ঠিক আছে আমি ভাইকে বলে দেবো তোমাকে পৌঁছে দিতে। বলে মিতু মাথা নিচু করে হাতে চায়ের কাপের দিকে তাকিয়ে থাকললো মিতু।
আস্তে আস্তে ট্রেন চলে এলো গন্তব্যে। সব গুছিয়ে নামতে যাচ্ছিলো মিতু। হুট করে অয়ন বললো
— মিতু তোমার পরিবারের ছবি দেখালেনা যে?
— আমি ইচ্ছে করেই তোমার পরিবারের ছবি দেখতে চাইনি। আর আমি ও দেখাইনি। আমি চাই আমরা সারাজীবন দুজনের মনে দুজন থেকে যাই। নাইবা অন্য কাউকে দেখলাম। ম্লান হেসে বললো মিতু।
—- আমাদের কি আর কখনো দেখা হবে না মিতু? আকুতি নিয়ে জিজ্ঞেস করলো অয়ন।
—- কি হবে দেখা হয়ে? ক্ষণিকের স্মৃতিচারণ নাকি ভালোবাসার অপ্রাপ্তি? ঝাঝালো কণ্ঠে কথাগুলো বললো মিতু
— আমার কথা কি কখনো তোমার মনে পরে মিতু? কাঁপা স্বরে জিজ্ঞেস করলো অয়ন।
— কেন মনে হবে না?তোমার প্রতিটি স্মৃতি তো খুব যত্ন করে লালন করছি আমি। বলে চোখ মুছলো মিতু
—- অতীতের কোন কিছুই কি তোমার মনে দোলা দেয়না মিতু? করুন নয়নে বললো অয়ন
— তুমি জানোনা অয়ন? মেয়েদের কোন অতীত থাকতে নেই। থাকতে হয় শুধু বর্তমান আর ভবিষ্যৎ। যে দিন যাবার তা একসময় চলেই যায়। কিছুই বাকী থাকেনা৷ এসব এখন বাদ দাও। বাহিরে ভাই অপেক্ষা করছে। তুমি যাও ভাই তোমাকে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে দেবে।
বলে ব্যাগ হাতে দ্রুত বের হয়ে গেলো মিতু। কয়েকবার অয়ন মিতু মিতু বলে ডাক দিলেও মিতু আর পেছন ফিরে তাকালো না। হনহন করে ছুটে চললো বাড়ির দিকে। চোখের অশ্রু বাঁধা মানছে না। হুট করে তাকালো নিজের হাতের কিন্নরী চুড়ির দিকে আর ভাবতে লাগলো।কিছু মানুষ জীবন থেকে হুট করে চলে গিয়েও সবকিছু সাথে করে নিয়ে যায়। রেখে যায় ধূসর কিছু স্মৃতি।
বিঃদ্রঃ এই গল্পের কাহিনী ও চরিত্র কাল্পনিক।
এই বেলাশেষ গল্পের মত আরো গল্প পেতে আমাদের সাথে থাকুন।
আরো তথ্য জানতে TimetoEdu এর সাথেই থাকুন।