ভূমিকা
বর্তমান যুগে Microsoft Excel শুধু হিসাব-নিকাশ বা টেবিল তৈরির জন্য নয়, বরং ডাটা অ্যানালাইসিস, প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট, অফিস রিপোর্টিং এবং এমনকি ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটপ্লেসে কাজ করার জন্য একটি অপরিহার্য দক্ষতা হয়ে উঠেছে। আপনি ছাত্র, চাকরিজীবী, উদ্যোক্তা বা ফ্রিল্যান্সার — যেই বিভাগেই থাকুন না কেন — Excel আয়ত্ত করলে আপনার ডাটা পরিচালনা, বিশ্লেষণ ও উপস্থাপনার ক্ষমতা অনেক গুণ বৃদ্ধি পায়। এই ব্লগে আমরা ধাপে ধাপে জানতে চলেছি সেই ১০টি ফাংশন সম্পর্কে যেগুলো জানলে প্রতিদিনের কাজ দ্রুত ও নির্ভুলভাবে করা যাবে। প্রতিটি ফাংশনের সঙ্গে দেবামু প্রয়োজনীয় টিপস, বাস্তব উদাহরণ, এবং অনুশীলনের আইডিয়া যাতে আপনি অল্প সময়ে কাজে লাগাতে পারেন।
১. SUM ফাংশন
ব্যবহার: নির্দিষ্ট রেঞ্জের সংখ্যাগুলোর যোগফল বের করতে।
Syntax: =SUM(A1:A10)
কার্যকরী উদাহরণ: মাসিক বিক্রির মান, বাজেট বা ব্যয়ের মোট হিসাব করতে।
টিপস: খেয়াল রাখুন যে ফাঁকা সেলগুলো (blank) SUM-এ সমস্যা করে না; কিন্তু টেক্সট ভ্যালু থাকলে সমস্যা হবে। ভুল রেঞ্জ সিলেক্ট করলে ফলও ভুল হয়ে যাবে — তাই ড্র্যাগ করে সিলেক্ট করার আগে কলামের হেডার পরীক্ষা করুন। বড় টেবিলে AutoSum (Alt + =) দ্রুত কাজ করে।
প্র্যাকটিস: একটি নতুন শিটে A1 থেকে A12 পর্যন্ত মাসিক খরচ লিখুন — =SUM(A1:A12)
বসিয়ে মোট বের করুন। এরপর কিছু সেলে খালি বা টেক্সট বসিয়ে দেখুন কিভাবে SUM কাজ করে এবং কোথায় সমস্যা হয়।
২. AVERAGE ফাংশন
ব্যবহার: ডাটাসেটের গড় বের করতে।
Syntax: =AVERAGE(B1:B10)
কখন ব্যবহার করবেন: শিক্ষার্থীর মার্কসের গড়, মাসিক বিক্রির গড় ইত্যাদি বের করার জন্য।
টিপস: যদি কোনো সেলে টেক্সট থাকে বা শর্তভিত্তিক গড় চান, তাহলে AVERAGEIF
বা AVERAGEIFS
ব্যবহার করুন, যেমন =AVERAGEIF(A1:A10, ">0")
। ভুল ভ্যালু থাকলে IFERROR
দিয়ে সুরক্ষাও নিতে পারেন।
প্র্যাকটিস: ১০ জনের টেস্ট স্কোর রেখে AVERAGE
বের করুন। পরে AVERAGEIF
প্রয়োগ করে ৫০’র উপরে যারা পেয়েছেন তাদের গড় বের করুন।
৩. IF ফাংশন
ব্যবহার: শর্তসাপেক্ষ সিদ্ধান্ত নেয়া; ভিন্ন শর্তে ভিন্ন ফল দেখানো।
Syntax: =IF(condition, value_if_true, value_if_false)
উদাহরণ: =IF(B2>=40, "Pass", "Fail")
— পরীক্ষার ফলাফলের জন্য।
এডভান্সড ব্যবহার: nested IF বা AND
/OR
ব্যবহার করে জটিল শর্ত তৈরি করা যায়। উদাহরণ: =IF(AND(B2>=40, C2>=40), "Passed Both", "Check Subjects")
। নতুন Excel ভার্সনে IFS
বা SWITCH
ব্যবহার করলে nested IF-এর জটিলতা কমে।
টিপস: লজিক্যাল টেস্টে ভুল বোঝাবুঝি এড়াতে parentheses ঠিক রাখুন; এবং ফলাফল টেক্সট হলে কোটস ব্যবহার করুন (“Pass”)।
প্র্যাকটিস: একটি নম্বর কলাম বানিয়ে IF
দিয়ে Pass/Fail চিহ্নিত করুন; পরে IFS
দিয়ে A/B/C গ্রেড সিস্টেম তৈরি করে দেখুন।
৪. VLOOKUP ফাংশন
ব্যবহার: টেবিল থেকে নির্দিষ্ট কী দিয়ে সংশ্লিষ্ট তথ্য খুঁজে পাওয়া (উল্লম্বভাবে)।
Syntax: =VLOOKUP(lookup_value, table_array, col_index_num, [range_lookup])
বাস্তব উদাহরণ: প্রোডাক্ট আইডি দিয়ে প্রোডাক্টের দাম বা নাম বের করা।
টিপস: যদি আপনি সঠিক মিল চান, range_lookup
-এ FALSE
ব্যবহার করুন। VLOOKUP সবসময় টেবিলের বামকা কলাম থেকে দেখে — তাই যদি আপনার lookup কলাম মাঝখানে থাকে, তাহলে INDEX+MATCH
ব্যবহার করা বুদ্ধিমানের। সূত্রে রেঞ্জগুলো absolute reference ($A$2:$D$100) রাখা ভালো যাতে সূত্র কপি করলে রেঞ্জ বদলায় না।
প্র্যাকটিস: A2:D10 এ প্রোডাক্ট লিস্ট (ID, Name, Category, Price) তৈরি করুন। F1 এ একটি ID লিখে VLOOKUP দিয়ে Price দেখান। পরে একই কাজ INDEX+MATCH দিয়ে করুন।
৫. HLOOKUP ফাংশন
ব্যবহার: HLOOKUP হচ্ছে HORIZONTAL LOOKUP — সারি ভিত্তিক ডাটা খোঁজার জন্য।
Syntax: =HLOOKUP(lookup_value, table_array, row_index_num, [range_lookup])
উদাহরণ: যদি আপনার শিল্পী বা প্রোডাক্ট হেডারটি সবার উপরে থাকে এবং নিচে ডাটা থাকে, HLOOKUP ব্যবহার করবেন। তবে আজকাল INDEX+MATCH
বা XLOOKUP
(নতুন ভার্সনে) বেশি শক্তিশালী বিকল্প।
প্র্যাকটিস: একটি হরাইজন্টাল টেবিল বানান যেখানে প্রথম সারিতে প্রোডাক্ট আইডি এবং নিচের সারিতে প্রাইস আছে — HLOOKUP দিয়ে প্রাইস আনুন।
৬. CONCATENATE / CONCAT / TEXTJOIN
ব্যবহার: বিভিন্ন সেলের টেক্সট একসাথে জোড়া।
Syntax: =CONCAT(A1, " ", B1)
অথবা =TEXTJOIN(" ", TRUE, A1, B1)
কার্যকরী উদাহরণ: First name এবং Last name একসাথে করে Full name বানানো। TEXTJOIN
-এ delimiter দিলে খালি সেলগুলোও এড়িয়ে দেওয়া যায় — যেমন =TEXTJOIN(", ", TRUE, A2:A5)
।
টিপস: নতুন Excel-এ CONCAT
বা TEXTJOIN
জনপ্রিয়, কারণ এগুলো স্ট্রিং ম্যনিপুলেশনে বেশি নমনীয়।
প্র্যাকটিস: A1 এ প্রথম নাম, B1 এ শেষ নাম রাখুন; CONCAT/CONCATENATE/TEXTJOIN দিয়ে ফুল নাম তৈরি করুন। তারপর LEFT/RIGHT/MID
দিয়ে নামের অংশ বের করার অনুশীলন দেখুন।
৭. LEFT, RIGHT & MID
ব্যবহার: টেক্সট স্ট্রিং থেকে অংশ কেটে নেওয়া।
Syntax: =LEFT(text, num_chars)
, =RIGHT(text, num_chars)
, =MID(text, start_num, num_chars)
উদাহরণ: ধরুন A1 এ “BTG-2025-001” আছে; =LEFT(A1,3)
দিলে “BTG” পাওয়া যাবে; =RIGHT(A1,3)
দিলে “001”; =MID(A1,5,4)
দিলে “2025” পাওয়া যায়।
টিপস: টেক্সট থেকে নম্বর কেটে নিয়ে VALUE()
দিয়ে সংখ্যা বানাতে পারেন: =VALUE(MID(A1,5,4))
।
প্র্যাকটিস: বিভিন্ন প্রোডাক্ট কোড বানিয়ে ভিন্ন অংশগুলো আলাদা সেলে তুলে আনুন এবং সেগুলোকে ব্যবহার করে রিপোর্ট তৈরি করুন।
৮. LEN ফাংশন
ব্যবহার: স্ট্রিংয়ের দৈর্ঘ্য নির্ণয় করতে।
Syntax: =LEN(A1)
কার্যকরী উদাহরণ: ইমেইল বা মোবাইল নম্বর ভ্যালিডেশন — যেমন মোবাইল নম্বর ১১ ডিজিট কিনা চেক করা। =LEN(TRIM(A1))
ব্যবহার করে অতিরিক্ত স্পেসও বাদ দেয়া যায়।
টিপস: LEN
-এর সাথে FIND
বা SEARCH
ব্যবহার করে সাবস্ট্রিংয়ের অবস্থানও বের করা যায়।
প্র্যাকটিস: নামের কলামে LEN
চেক করে যারা ১৫ অক্ষরের বেশি তাদের আলাদা করে দেখান।
৯. PROPER, UPPER, LOWER
ব্যবহার: টেক্সটের কেস কনভার্ট করতে।
Syntax: =PROPER(A1)
, =UPPER(A1)
, =LOWER(A1)
কার্যকারিতা: ডাটাবেসে নাম/ইমেইল কনসিসটেন্সি বজায় রাখতে ব্যবহৃত হয়। =PROPER(TRIM(A1))
দিয়ে অতিরিক্ত স্পেস সরিয়ে কেস ঠিক রাখা যায়।
প্র্যাকটিস: একটি মিশ্র কেসে নামের তালিকা নিয়ে সবগুলোকে PROPER করুন এবং পুনরায় যাচাই করুন।
১০. NOW ও TODAY
ব্যবহার: বর্তমান সময় ও তারিখ আনার জন্য।
Syntax: =NOW()
, =TODAY()
ব্যবহারিক দৃশ্য: রিপোর্টে “আপডেট তারিখ” দেখানো, বা ড্যাশবোর্ডে লাইভ তারিখ ব্যবহার করা। =TODAY()-A1
দিয়ে কোনো তারিখ থেকে কত দিন পেরিয়েছে তা বের করা যায়। মনে রাখবেন এগুলো volatile functions — প্রতিবার শিট রি-ক্যালকুলেট হলে বদলে যাবে। বড় শিটে এগুলো ব্যবহার করার সময় সতর্কতা দরকার।
প্র্যাকটিস: A1 এ জয়েনিং তারিখ দিন; =TODAY()-A1
করে কর্মী হিসেবে কত দিন হয়েছে বের করুন এবং DATEDIF
দিয়ে বছর/মাস/দিন আলাদাভাবে দেখান।
VLOOKUP vs INDEX+MATCH (কবে কোনটি ব্যবহার করবেন)
VLOOKUP সহজ ও সরাসরি, কিন্তু টেবিলের বাম কলামেই lookup value থাকতে হবে।
INDEX+MATCH ফ্লেক্সিবল: টেবিলের যেকোনো দিকে কাজ করে এবং বড় টেবিলে বেশি নির্ভরযোগ্য।
উদাহরণ:=INDEX(C2:C100, MATCH(F2, A2:A100, 0))
— এখানে MATCH প্রথমে সারি খুঁজে বের করে এবং INDEX সেই সারির কোলাম থেকে ভ্যালু দেয়।
নামকৃত রেঞ্জ (Named Ranges) ও টেবিল (Tables)
বড় শিটে কাজ করলে নামকৃত রেঞ্জ ব্যবহার করা উচিত। উদাহরণ: A1:A100 কে Sales_Value
নামে রাখলে সূত্রে =SUM(Sales_Value)
ব্যবহার করলে পড়তেও সহজ হয়। Insert → Table করে ডাটা টেবিল করলে নতুন রো যুক্ত করলেও সূত্র অটোমেটিক আপডেট হয়।
ডায়নামিক অ্যারে ও নতুন ফাংশন (যদি আপনার Excel সাপোর্ট করে)
UNIQUE
,FILTER
,SORT
— ডায়নামিক অ্যারে দিয়ে দ্রুত ডাটা প্রক্রিয়া করা যায়: উদাহরণ=UNIQUE(A2:A100)
।XLOOKUP
— VLOOKUP/HLOOKUP-এর আধুনিক বিকল্প; সহজে যে কোনো দিক থেকে খোঁজ নেয় এবং আরও নমনীয় ফল দেয়।
শর্টকাটস ও কাজের গতি বাড়ানোর টিপস
Ctrl + C / Ctrl + V
— কপি-পেস্ট।Ctrl + Z
— Undo।Ctrl + Shift + L
— Filter টগল।Alt + =
— দ্রুত SUM সূত্র তৈরী।Ctrl + Arrow keys
— দ্রুত ডাটা ব্লকে চলে যান।F4
— সূত্রের রেফারেন্স টগল করে absolute/relative পরিবর্তন করে।
৭ দিনের Excel চ্যালেঞ্জ
দিন ১: SUM, AVERAGE, COUNT দিয়ে ছোট ডাটা সেট অনুশীলন।
দিন ২: IF ও Nested IF প্রয়োগ করে গ্রেড সিস্টেম বানানো।
দিন ৩: VLOOKUP এবং INDEX+MATCH দিয়ে প্রোডাক্ট লুকআপ তৈরি।
দিন ৪: TEXT ফাংশন দিয়ে নাম-নাম্বার ফরম্যাটিং।
দিন ৫: পিভট টেবল দিয়ে রিপোর্ট তৈরি।
দিন ৬: Conditional Formatting দিয়ে হাইলাইটিং।
দিন ৭: ছোট প্রকল্প — মাসিক ব্যয় অনালাইসিস রিপোর্ট বানান এবং শেয়ার করুন (কমেন্টে আপনার স্ক্রিনশট দিন)।
প্রশ্ন
আপনার কাজের কোন অংশে Excel সবচেয়ে বেশি দরকার হয়? মন্তব্য করে জানান।
আপনি কোন ফাংশনটি আগে থেকেই জানেন, এবং কোনটি শেখার জন্য সবচেয়ে আগ্রহী?
কি ধরনের ছোট প্রকল্প দেখতে চান — ব্যক্তিগত বাজেট, স্কুল গ্রেড, বা অনলাইন বিক্রয় রিপোর্ট?
উপসংহার
Microsoft Excel শেখা অর্থাৎ শুধু একটি সফটওয়্যার শেখা নয় — এটি আপনার কাজের ধরণ, দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং প্রফেশনাল প্রেজেন্টেশন বাড়িয়ে দেয়। আজকের আলোচ্য ১০টি ফাংশন — SUM, AVERAGE, IF, VLOOKUP, HLOOKUP, CONCAT/TEXTJOIN, LEFT/RIGHT/MID, LEN, PROPER/UPPER/LOWER এবং NOW/TODAY — আপনাকে দৈনন্দিন কাজে শক্তিশালী করে তুলবে। প্রতিটি ফাংশনের সঙ্গে থাকা প্র্যাকটিসগুলো নিজে করে দেখুন; ভুল হলে চিন্তা না করে পুনরায় চেষ্টা করুন — কারণ ভুল থেকেই শেখা হয়।
💡 আপনি কি জানতে চান – কীভাবে Excel স্কিল ব্যবহার করে প্রথম ফ্রিল্যান্স কাজ পাওয়া যায়?
✔️ কিভাবে প্রোফাইল সাজালে ক্লায়েন্ট আকর্ষিত হবে
✔️ কীভাবে সঠিক প্রাইসিং নির্ধারণ করবেন
✔️ ক্লায়েন্টের সাথে প্রফেশনাল কমিউনিকেশন করবেন কিভাবে
👉 এই এক্সক্লুসিভ গাইড আমি শুধুমাত্র তাদের সাথেই শেয়ার করব যারা পোস্টটি শেয়ার করবেন এবং নিচে কমেন্টে “Interested” লিখবেন।
📌 লক্ষ্য: কমপক্ষে ৫০টি শেয়ার ও কমেন্ট হলে পরবর্তী ব্লগ/গাইড প্রকাশ করা হবে।
চলুন, যারা সত্যিই ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে চান, তারা একসাথে শিখি এবং এগিয়ে যাই! 🚀