আজকের বিষয়: এসএসসি পরীক্ষার গ্রেডিং সিস্টেম 2024, কিভাবে মানবন্টন করা হবে
আর অল্প কিছুদিন পর এসএসসি পরীক্ষা। আর এই সময়ে অধিকাংশেরই প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের গ্রেডিং কিভাবে করা হবে? বিষয়টি এখনও অনেকের কাছেই কনফিউজিং। তাই আজকের এই পোস্টের মাধ্যমে চেষ্টা করবো সকলের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিতে । আমাদের কনটেন্ট সমূহ:
- বাংলা ও ইংরেজিতে কিভাবে গ্রেডিং সিস্টেম করা হয়?
- মেন সাবজেক্ট গুলোতে কিভাবে গ্রেটিং সিস্টেম করা হয়?
- ফোর্থ সাবজেক্ট এ কিভাবে গ্রেডিং সিস্টেম করা হয়?
- গ্রেডিং সিস্টেমের চূড়ান্ত ধাপ.
- গ্রেডিং সিস্টেমের দুইটা উদাহরণ।
প্রথমত, আমাদের এবার এসএসসি তে পরীক্ষার বিষয় মোট ৯ টি, এটি আমরা সবাই জানি। বাংলা ১ম বাংলা ২য়, ইংরেজি ১ম ইংরেজি ২য়, গণিত, বিভাগভিত্তিক সাবজেক্ট বাকি ৪ টি অর্থাৎ পদার্থ , রসায়ন,উচ্চতর গণিত ও জীব বিজ্ঞান। এছাড়াও বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়, ধর্ম এবং আই সি টি এই ৩টি সাবজেক্টও আছে, কিন্তু এগুলোর নীমার্ক নেওয়া হবে জেএসসি থেকে (খুব সম্ভবত)। সুতরাং মোট সাবজেক্ট ৯+৩ = ১২টি। তার মধ্যে মেইন সাবজেক্ট ১১ টি এবং চতুর্থ সাবজেক্ট ১ টি (কারো হাইয়ার ম্যাথ, কারো বায়োলজী অথবা কৃষি)। এতটুকু জ্ঞান দিয়েই আমরা আপাতত গ্রেডিং সিস্টেম টা বুঝতে পারবো।
১. বাংলা ও ইংরেজিতে কিভাবে গ্রেডিং সিস্টেম করা হয়?
বাংলা ১ম এবং বাংলা ২য় এর ক্ষেত্রে কোনোদিন আলাদা গ্রেডিং সিস্টেম করা হয়না বরং দুটোর গড় গ্রেড কে নেওয়া হয় হিসাব করার সময়। ইংরেজি প্রথম ও ইংরেজি দ্বিতীয় এর ক্ষেত্রেও একই নিয়ম। এক্ষেত্রে তখন বাংলা ১ম ও বাংলা ২য় না বলে একত্রে গ্রেড কে সরাসরি •বাংলা• এর গ্রেড বলা হয়, তেমনিভাবে ইংরেজি ১ম ও ইংরেজি ২য় এর সমন্বিত মার্ক কে বলা হবে ইংরেজি । উদাহরণস্বরূপ: তুমি যদি বাংলা ১ম এ 5.00 এবং বাংলা দ্বিতীয়তে 4.00 পাও, সেক্ষেত্রে তোমার বাংলায় গ্রেড আসবে (5.00+4.00)÷2 = 4.50। তেমনিভাবে কেও যদি ইংরেজি ১ম ও ২য় তে যথাক্রমে 4.00 এবং 3.50 পায়, তার ইংরেজির গ্রেড আসবে (4.00+3.50)÷2 = 3.75। আর এই গ্রেডই পরবর্তী হিসাবের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হবে।
২. মেন সাবজেক্ট গুলোতে কিভাবে গ্রেডিং সিস্টেম করা হয়?
মেইন সাবজেক্ট গুলোর ক্ষেত্রে কোন গড় গ্রেডিং করা হয়না। প্রত্যেকটা সাবজেক্টেরই আলাদাভাবে গ্রেড গণনা করা হয়।
৩. ফোর্থ সাবজেক্টে কিভাবে গ্রেডিং সিস্টেম করা হয়?
ফোর্থ সাবজেক্ট এর ক্ষেত্রে 5এর মধ্যে 2 এর বেশি অংশটুকু গণনা করা হয়। অর্থাৎ একজন যদি ফোর্থ সাবজেক্ট এ 5.00 পায়, তাহলে বলা যায় সে 2.00 থেকে, 5-2 = 3 বেশি পেয়েছে। সুতরাং তার ফোর্থ সাবজেক্ট থেকে 3 গণনা করা হবে। অর্থাৎ আমি আমার ফোর্থ সাবজেক্ট এর গ্রেড থেকে যদি 2 বিয়োগ করি, তবে সেই বিয়োগফল আমি আমার মূল গ্রেড এ পাবো ।
4. গ্রেডিং সিস্টেমের চূড়ান্ত ধাপ
এবার চূড়ান্ত ধাপ।বাংলা ১ম-২য় এর গড় গ্রেড তথা বাংলার গ্রেড (১টি)
ইংরেজি প্রথম পত্র ও ইংরেজি ২য় এর মোট গ্রেড তথা ইংরেজি এর গ্রেড একই হবে ।
বাকি মেইন সাবজেক্ট সমুহ: গণিত, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়, আইসিটি, ধর্ম এবং ফোর্থ সাবজেক্ট বাদে বাকি ৩ টি গ্রুপ সাবজেক্ট 7 টি ।
মোট ৯টি সাবজেক্ট
এবার আমাদের কাজ এই ৯ টা সাবজেক্ট এর গ্রেড পয়েন্ট গুলো একে একে যোগ করা। যোগফল যত আসবে তার সাথে ফোর্থ সাবজেক্ট এ 2.00 এর বেশি যেই কয় পয়েন্ট পেয়েছি তত যোগ করে দিবো। (৩য় ধাপের মতো)
আর ফোর্থ সাবজেক্ট এর এই বেশি পয়েন্টটুকু কে তুমি বোনাস হিসেবে ধরতে পারো। এবার আমাদের হাতে গ্রেড পয়েন্ট গুলোর যোগফল আছে। এই যোগফলকে মোট সাবজেক্ট সংখ্যা দ্বারা ভাগ করবো। মোট সাবজেক্ট কতটি? ৯ টি! অনেকে হয়তো বলবে ফোর্থ সাবজেক্ট নিয়ে তো ১০ টি হয়, কিন্তু আমি যেমন বললাম ফোর্থ সাবজেক্টের বাড়তি এই পয়েন্টটুকু আসলে বোনাস। তাই গড় করার সময় আর ফোর্থ সাবজেক্টকে হিসাব করার দরকার নেই।
অর্থাৎ উপরে উল্লেখিত নিয়মে প্রাপ্ত ৯ টি বিষয়ের গ্রেড এবং ফোর্থ সাবজেক্ট এ 2.00 এর বেশি পয়েন্ট টুকুর যোগফলকে মোট সাবজেক্ট সংখ্যা ৯ দ্বারা ভাগ করলে যেই ভাগফল আসবে সেটিই হবে আমার এসএসসি এর জিপিএ!
মনে রাখতে হবে যদি গড় 5 এর বেশি আসে সেক্ষেত্রে জিপিএ 5 বলেই গণ্য হবে।
5.গ্রেডিং সিস্টেমের কয়েকটি উদাহরণ!
দুটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি একদম সহজ হয়ে যাবে।
১। দিপুমণি তার এসএসসি পরীক্ষায় বাংলা ১ম, বাংলা ২য়, ইংলিশ ১ম, ইংলিশ ২য়, গণিত, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, হাইয়ার ম্যাথ, বায়োলজি, আইসিটি, ধর্ম, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় এ যথাক্রমে 5, 4, 4, 5, 5, 5, 5, 5, 5, 5, 4, 4 পেলো। তার ফোর্থ সাবজেক্ট ছিলো বায়োলজি। এসএসসি তে তার জিপিএ কত আসবে?
উত্তরঃ এখানে,
দিপুমণি এর বাংলায় প্রাপ্ত গ্রেড = বাংলা ১ম ও ২য় এর গড় = (5 + 4)/2 = 4.50
ইংলিশ এ প্রাপ্ত গ্রেড = ইংলিশ ১ম ও ২য় এর গড় = (4 + 5)/2 = 4.50
বাকি ৭টি মেইন সাবজেক্ট এ প্রাপ্ত গ্রেড = 5, 5, 5, 5, 5, 4, 4
ফোর্থ সাবজেক্ট এ প্রাপ্ত গ্রেড = 5.00
ফোর্থ সাবজেক্ট এ 2.00 এর বেশি পয়েন্ট (এক্সট্রা পয়েন্ট) = 5.00 – 2.00 = 3
ফোর্থ সাবজেক্ট এর এক্সট্রা পয়েন্ট, বাংলা, ইংলিশ এবং বাকি ৭টি মেইন সাবজেক্ট এর গ্রেডসমূহের যোগফল = (3 + 4.5 + 4.5 + 5 + 5 + 5 + 5 + 5 + 4 + 4) = 45
এবার এই যোগফল কে গড় করি তথা ৯ দ্বারা ভাগ করিঃ 45/9 = 5
সুতরাং, দিপূমণি এর জিপিএ = 5.00!
বিঃদ্রঃ দিপূমণি এর গ্রেডের দিকে লক্ষ্য করলে দেখতে পাবে, কেও যদি জেএসসিতে বাওবি, আইসিটি, ধর্ম ৩ বিষয়েই এ+ মিস করে এ পেয়ে থাকো, তোমাদেরও সুযোগ আছে এ+ পাওয়ার, যদি এসএসসির প্রতিটি বিষয়ে এ+ আসে। সুতরাং টেনশন করোনা!
২। টনি স্টার্ক এবছরের এসএসসি পরিক্ষার্থী। সে টাইম ট্রাভেল করে পরীক্ষা দেওয়ার আগেই তার রেজাল্ট দেখে আসলো। তার গ্রেডসমূহ- বাংলা ১ম, বাংলা ২য়, ইংলিশ ১ম, ইংলিশ ২য়, গণিত, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, হাইয়ার ম্যাথ, বায়োলজি এ যথাক্রমে 5, 5, 4, 5, 3, 5, 3, 5, 5। ফোর্থ সাবজেক্ট হাইয়ার ম্যাথ। জেএসসিতে আইসিটি, ধর্ম, বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় এ টনির গ্রেড ছিলোঃ 5, 4, 4। টনির জিপিএ কত আসবে?
উত্তরঃ এখানে,
টনি এর বাংলায় প্রাপ্ত গ্রেড = বাংলা ১ম ও ২য় এর গড় = (5 + 5)/2 = 5
ইংলিশ এ প্রাপ্ত গ্রেড = ইংলিশ ১ম ও ২য় এর গড় = (4 + 5)/2 = 4.50
বাকি ৭টি মেইন সাবজেক্ট এ প্রাপ্ত গ্রেড = 3, 5, 5, 3, 5, 5, 4, 4 (গ্রুপ সাবজেক্ট ৩ টি, গণিত ১ টি এবং জেএসসি থেকে নেওয়া বাকি সাবজেক্ট ৩ টি)
ফোর্থ সাবজেক্ট এ প্রাপ্ত গ্রেড হলো 5
ফোর্থ সাবজেক্ট এ 2.00 এর বেশি পয়েন্ট বাড়তি পয়েন্ট = 5- 2= 3
ফোর্থ সাবজেক্ট এর এক্সট্রা পয়েন্ট,ইংলিশ এবং বাকি ৭টি মেইন সাবজেক্ট এর গ্রেডসমূহের যোগফল = (3 + 5 + 4.5 + 3 + 5 + 5 + 3 + 5 + 4 + 4) = 41.5 এইবার এই মোট
সুতরাং, টনি স্টার্ক এর জিপিএ = 4.61!
এখানে একটা জিনিস লক্ষণীয়, ১ নং প্রশ্নে আমরা দেখলাম দিপূমণি সকল সাবজেক্টে এ+ না পেয়েও জিপিএ ৫ পেয়েছে। এখানে অনেকে হয়তো বলবে, সে এ+ পেয়েছে তো কি হয়েছে, গোল্ডেন এ+ পায়নি, কারণ সে সকল সাবজেক্ট এ এ+ পায়নি। তাদের উদ্দেশ্যে বলি, এইযে “গোল্ডেন এ+” এর বিষয়টা সম্পূর্ণই বানোয়াট একটা জিনিস। গোল্ডেন এ+ বলে কিছু নেই। কেও যদি দুটি বিষয়ে এ পেয়ে এ+ পায়, আরেকজন যদি সকল বিষয়ে এ+ পেয়ে জিপিএ ৫ পায়, তাদের রেজাল্টের মধ্যে বিন্দুমাত্র পার্থক্য নেই। তারা দুজনেই জিপিএ ৫ পেয়েছে (তবে হ্যাঁ, মার্ক্স ম্যাটার করে)। গোল্ডেন এ+ এর ধারণাটা কোথা থেকে এসেছে কে জানে। তুমি তোমার সার্টিফিকেটের কোথাও লিখবেনা “গোল্ডেন এ+”। সুতরাং এই ভুল ধারণা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। আরেকটি উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টি ক্লিয়ার হয়ে উঠবে। ধরো, তুমি সকল সাবজেক্ট এ এ+ পেয়ে ১২০০ মার্ক্স পেয়েছো। অন্যদিকে তোমার বন্ধু ২ সাবজেক্ট এ, এ+ মিস করে ফোর্থ সাবজেক্ট এর কল্যাণে জিপিএ ৫ নিয়ে ১২০২ মার্ক্স পেয়েছে। কার পজিশন আগে হবে বলতো?
উত্তরঃ তোমার বন্ধুর। কারণ উভয়েরই জিপিএ সমান, কিন্তু তার মার্ক্স বেশি। কে কয় বিষয়ে এ+ পেয়েছ এটা কোথাও কাউন্টই করা হবেনা! সুতরাং সেই নো টু গোল্ডেন এ+ 😛
আশা করি সকলের কনফিউশন দূর হয়েছে। এছাড়াও এবিষয়ে যদি কারো কোন প্রশ্ন থাকে, ইমেইল করে জানাতে পারো। আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। যারা এই পর্যন্ত লেখাটি পড়েছ সবাইকে ধন্যবাদ।